বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলায় বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ১৯৯২ সালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের(RRRC) অফিসটি কক্সবাজার শহরের মোটেল রোডে অবস্থিত, এ কার্যালয়টি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধিনে ৩৪ টি ক্যাম্প-ইন-চার্জের অফিস আছে যার মধ্যে ৩৩ টি কক্সবাজার জেলায় উখিয়া, টেকনাফে অবস্থিত এবং ১টি নোয়াখালী জেলায় ভাসানচরে অবস্থিত। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের(MoDMR) অধীনে, জাতিসংঘ(UN) এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের কাজ করে। বিভিন্ন সরকারী সংস্থা, আন্তরজাতিক সংস্থা(INGOs), জাতিসংঘের সংস্থা(UN), জাতীয় সংস্থা(NGOs) এবং অন্যান্য সকল সংস্থার সাথে সমন্বয় করে মানবিক প্রক্রিয়ার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং পর্যবেক্ষণের কাজ করে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গ নাগরিকদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের পরিকল্পনা করে এবং তৃতীয় দেশে (3rd country resettlement) রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করে। ১৯৯১-৯২ সালে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের কারণে মায়ানমার হতে প্রচুর সংখ্যক রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় গ্রহন করে। বাংলাদেশ সরকার মায়ানমারের উদ্বাস্তুদেরকে মানবিক কারণে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয় এবং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের জন্য বাসস্থান, ঔষধ, খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করে। ১৯৯২ সালে গণনা পূর্বক ২,৫০,৮৭৭ জন শরণার্থীকে রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। উক্ত শরণার্থীদেরকে ২ টি ক্যাম্পে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯৩ সালে UNHCR এর সাথে সমঝোতা স্মারকের ফলে UNHCR ও WFP এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়। আলোচ্য শরণার্থীদের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৯২ সালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় নামে একটি নতুন প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টি করা হয় এবং ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে বিপুল সংখ্যাক কর্মকর্তা ও দক্ষ জনবল নিয়োজিত করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে ২৮ শে জুলাই ২০০৫ খ্রি: পর্যন্ত সময়ে মোট ২,৩৬,৫৯৯ জন শরণার্থীকে মায়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয় এবং ২০০৬ থেকে ২০০৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৯২৬ জন শরণার্থীকে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন করা হয়। ১৯৯২ সালে কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্প ২ টিতে ১৩২৯ জন লিংক সদস্যসহ মোট ৩২,৭১৩ জন শরণার্থী (জম্ম-মৃত্যূ, নিকটতম (1st blood) আত্মীয় সহ অবস্থান করছে ০১-০৪-২০১৫ খ্রিঃ: তারিখ পর্যন্ত) । ২৫ আগস্ট ২০১৭ খ্রি. এর পর প্রায় ৭,৫০,০০০ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে কুতুপালং শর ক্যাম্প ও নয়াপাড়া রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্পে শরণার্থী ছিল ৪০,৬৩১ জন (৪%)। বর্তমানে সর্বমোট ১,০০৩,৩৯৪ জন মায়ানমারের রোহিঙ্গা আছে যারমধ্যে শিশু-৫৪%, পূর্ণবয়স্ক-৪৪%, বৃদ্ধ-০৪%, প্রতিবন্ধী-১% নারী-৫,১১,৭৩১ জন (৫১%) ও পুরুষ-৪,৯১,৬৬৩ জন (৪৯%) রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারব্যক্ত করেছে। |